দেস্ক রিপোর্টঃ বিশ্বের দৃষ্টি আজ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (UNGA) দিকে ছিল, যেখানে একটি যুগান্তকারী রেজোলিউশন পাস হয়েছে। এই রেজোলিউশন গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান, হামাস-মুক্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতি এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য শক্তিশালী আহ্বান জানিয়েছে। “নিউ ইয়র্ক ডিক্লারেশন” নামে পরিচিত এই রেজোলিউশনটি ১৪২টি দেশের সমর্থনে জয়ী হয়েছে, মাত্র ১০টি দেশ বিরোধিতা করেছে এবং ১২টি দেশ ভোটদানে বিরত ছিল। এই ভোট ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সমাধানে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল এটিকে তীব্র সমালোচনা করেছে।
১৯৩ সদস্যের জাতিসংঘে ১৪২টি দেশ এই রেজোলিউশনের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, যা বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থনের একটি শক্তিশালী বার্তা। বিরোধিতাকারীদের মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, আর্জেন্টিনা, হাঙ্গেরি, এবং কয়েকটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র। ১২টি দেশ, যার মধ্যে কিছু ইউরোপীয় রাষ্ট্র, ভোট দেওয়া থেকে বিরত ছিল। এই ভোটের আগে গাজার মানবিক সংকট নিয়ে তীব্র আলোচনা হয়, এবং এটি ২২ সেপ্টেম্বরের উচ্চ-পর্যায়ের সম্মেলনের পথ প্রশস্ত করেছে, যেখানে যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্সসহ বেশ কয়েকটি দেশ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেবে বলে ঘোষণা করেছে।
রেজোলিউশনটি গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, হামাসের অস্ত্র ত্যাগ এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য “সুনির্দিষ্ট ও সময়োপযোগী” পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছে। এটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার নিন্দা করেছে এবং সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি পর্যবেক্ষক রিয়াদ মনসুর আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “এটি ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য ন্যায়ের প্রথম ধাপ, একটি আশার আলো!”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “গাজায় যা ঘটছে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ। এই রেজোলিউশন শান্তি ও ন্যায়ের পথে একটি বড় পদক্ষেপ।” চীন, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং আরব লীগের দেশগুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি মর্গান ওর্তাগুস এই রেজোলিউশনকে “হামাসের জন্য উপহার” বলে কটাক্ষ করেছেন, যখন ইসরায়েল এটিকে “একতরফা ও বিপজ্জনক” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। কিন্তু ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল বারোট বলেন, “এই রেজোলিউশন হামাসকে বিশ্ব মঞ্চে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং শান্তির পথে একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।” যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ফ্রান্স ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে, তবে এটি গাজার পরিস্থিতির উন্নতির উপর নির্ভর করবে।
এই রেজোলিউশন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের মাধ্যমে গাজায় একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক মিশন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে, যা মানবিক সাহায্য ও পুনর্গঠন তদারকি করবে। সেপ্টেম্বর ১৭-এর মধ্যে ইসরায়েলের দখলদারিত্ব শেষ করার দাবি জানানো হবে, এবং ২২ সেপ্টেম্বরের সম্মেলনে আরও দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে পারে। বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিন-সমর্থকরা এই ভোটকে “গণহত্যার বিরুদ্ধে জয়” হিসেবে উদযাপন করছে।