ওয়াশিংটন: যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সাম্প্রতিক মন্তব্য ভারত-আমেরিকা সম্পর্কে নতুন মোড় এনেছে। তিনি বলেছেন, ভারত রাশিয়ান তেল কেনা বন্ধ করলে এবং তার বাজার খুলে দিলে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি ‘সর্ট আউট’ করা যাবে। এই কথা বলা হয়েছে সিএনবিসি-র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে, যা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভারতের তেল আমদানি নিয়ে উত্তেজনা বাড়িয়েছে।
লুটনিকের বক্তব্য অনুসারে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে ভারত তার তেলের মাত্র ১ শতাংশ রাশিয়া থেকে আমদানি করত। কিন্তু এখন সেই পরিমাণ বেড়ে হয়েছে ৪০ শতাংশে। তিনি অভিযোগ করেছেন যে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণে রাশিয়ান তেল সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে, যা ভারত কিনে রিফাইন করে বিশ্বব্যাপী বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে। “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এতে ‘ননসেন্স’ বলেছেন এবং বলেছেন যে এসব বন্ধ করতে হবে। ভারতের সঙ্গে চুক্তি হবে যখন তারা রাশিয়ান তেল কেনা বন্ধ করবে,” লুটনিক যোগ করেছেন।
এই মন্তব্যটি এসেছে ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের পর। গত আগস্ট মাসে আমেরিকা ভারতীয় আমদানির উপর ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপ করেছে, যা রাশিয়ান তেল কেনার জন্য শাস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এরপর ট্রাম্প ৫০ শতাংশ ট্যারিফের হুমকি দিয়েছেন। এই ট্যারিফগুলো ভারতের জন্য বড় ধাক্কা, কারণ ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ এবং রাশিয়া তার প্রধান সরবরাহকারী।
ভারত সরকার এই চাপের মুখে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, “এটা অন্যায় এবং অযৌক্তিক” এবং ভারত যেকোনো উৎস থেকে সেরা দরে তেল কিনবে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও জানিয়েছেন যে, রাশিয়ান তেল কেনা চালিয়ে যাবে কারণ এটা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, এই আমদানি বিশ্বব্যাপী তেলের দাম স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করছে।
যদিও ট্রাম্প এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো—ট্রাম্প মোদিকে ‘প্রিয় বন্ধু’ বলেছেন—কিন্তু বাণিজ্যিক চাপ অব্যাহত। লুটনিক আগের সপ্তাহে বলেছিলেন যে, ভারত এক-দুই মাসের মধ্যে ক্ষমা চেয়ে আলোচনাতে ফিরবে। ভারতীয় বাণিজ্যমন্ত্রী পিয়ূষ গোয়েল বলেছেন, নভেম্বরের মধ্যে প্রথম ধাপের চুক্তি হতে পারে।
এই ঘটনা ভারতের অ-পক্ষপাতী নীতিকে চ্যালেঞ্জ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভারত রাশিয়ান তেল কমাতে পারে কিন্তু সম্পূর্ণ বন্ধ করবে না, কারণ এতে তার অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়বে। আমেরিকার চাপ কি ভারতকে বাধ্য করবে, নাকি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে নতুন সংকট তৈরি করবে? এটাই এখন প্রশ্ন।