জুড়ীতে উপজেলা সদরের বাহিরে মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন

বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে উপজেলা কমপ্লেক্সের ভিতরে এবং পাশে সরকারি মডেল মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত

বিশেষ প্রতিনিধিঃ মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে উপজেলা কমপ্লেক্সের ভিতরে এবং পাশে সরকারি মডেল মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পরও একটি অর্থ লোভী সিন্ডিকেট উপজেলা শহর থেকে অনেক বাহিরে উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছেন শতশত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ। শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে উপজেলা চত্বর চৌমুহনীতে এ‌ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে মোঃ হাবিবের সঞ্চালনায় ও রেজান আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট সমাজসেবক হাবিবুর রহমান হাবিব, মাওলানা ফখর উদ্দিন পাঠান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আপ্তাব আলী, এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, শিক্ষক শাহীন আহমেদ, ছাত্রনেতা সাজিদ মাহমুদ, সার্জেন্ট আমজাদ হোসেন, বিশিষ্ট সমাজসেবক আছাদ উদ্দিন, অধ্যাপক বদরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন, হাবিবুর রহমান, জহিরুল ইসলাম, প্রবাসী মাশুক আহমেদ, সুমন আহমেদ, ছাত্র সমন্বয়ক মাহতাব ভূইয়া স্পন্দন, জাকির হোসেন বাবু সহ আরো অনেকেই।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জুড়ী উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভিতরে এবং পাশে সরকারি মডেল মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি শতভাগ চূড়ান্ত হওয়ার পরও একটি অর্থ লোভী সিন্ডিকেট উপজেলা শহর থেকে অনেক বাহিরে উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণের চেষ্টা করছে। আমরা ওই সিন্ডিকেটকে বলতে চাই, আপনারা টেকনিক্যাল কলেজ খেয়েছেন, আপনারা ফায়ার সার্ভিস খেয়েছেন, আপনারা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম খেয়েছেন, দয়া করে আল্লাহর ঘর মসজিদ খাবেন না? তাহলে আল্লাহর গজব পড়বে আপনাদের উপর। জুড়ী উপজেলার সবকিছু খেয়েও আপনাদের পেট ভরছে না কেন? এমন কোন অপকর্ম নেই যা আপনারা করছেন না। টাকা নিয়ে কি কবরে যাবেন? টাকার বিনিময়ে কি আজীবন বেঁচে থাকবেন। এবার থামুন। আল্লাহকে ভয় করুন। সৃষ্টিকর্তা ছাড় দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। এ সময় বক্তারা অবিলম্বে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের ভেতরে এবং পাশে মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ না নিলে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী সরকার যখন সারাদেশের মতো জুড়ী উপজেলায়ও একটি মডেল মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন তখন থেকেই এই আসনের এমপি ও সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দন এবং জুড়ী সদর জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাছুম রেজা সিন্ডিকেট অতীতের সকল প্রকল্পের মতই জুড়ী উপজেলা মডেল মসজিদটি গিলে খাওয়ার ফন্দি করেন। শাহাব-মাছুম সিন্ডিকেটের এই চক্রান্ত বুঝতে পেরে তৎকালীন জুড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মোঈদ ফারুক জনগণের দাবির প্রতি একমত হয়ে জুড়ী উপজেলা কমপ্লেক্স এর ভিতরে অথবা পাশেই জুড়ী উপজেলা মডেল মসজিদটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। জেলা প্রশাসক সহ এ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যখন দেখলো এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে জমি অধিগ্রহণে সরকারের তেমন কোন টাকাই খরচ হবে না। শহরের ভেতরে ও মেইন রাস্তার পাশে এবং দৃষ্টিনন্দন একটি জায়গায় মসজিদ নির্মাণ হবে। পুরো উপজেলার মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়ার সুযোগ পাবে। এজন্য সবকিছু বিবেচনা করে জুড়ী উপজেলা কমপ্লেক্সের ভিতরের টিনশেডের মসজিদের জায়গায় জুড়ী মডেল মসজিদ নির্মাণের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। মসজিদের জায়গা চূড়ান্ত হওয়ার বিষয়টি জেনে শাহাব-মাছুম সিন্ডিকেট তৎকালীন জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণকে ক্ষমতার পাওয়ার দিয়ে এবং টাকার বিনিময়ে রাতারাতি জুড়ী সদর জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাছুম রেজার বাড়ির পাশে পশ্চিম ভবানীপুর মৌজার আঞ্জুরী কুনা বিলে মডেল মসজিদটি নির্মাণের পায়তারা শুরু করেন। এ বিষয়টি জানাজানি হলে তৎকালীন সময়েও জুড়ী উপজেলা কমপ্লেক্স এর ভিতরে অথবা পাশেই মডেল মসজিদটি নির্মাণের জন্য জুড়ী উপজেলাবাসির ব্যানারে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মুখে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় এবং জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে জুড়ী উপজেলা কমপ্লেক্স এর ভিতরে এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় দফায় দফায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভা ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। কিন্তু কে শুনে কার কথা, সিন্ডিকেট নেতাদের প্রয়োজন টাকা এটা মসজিদ’ই হউক আর মন্দির’ই হউক। অবশেষে শাহাব-মাছুম সিন্ডিকেটের কাছে পরাজিত হলো জনগণের প্রাণের দাবি। জানা যায়, পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের নির্দেশেই জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাছুম রেজার বাড়ির পাশে পশ্চিম ভবানীপুর মৌজার আঞ্জুরী কুনা বিলেই জুড়ীর মডেল মসজিদের জন্য জায়গা অধিগ্রহণ করা হয় এবং সম্প্রতি সময়েই মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে বলে জানা যায়। এতে ক্ষুব্ধ জুড়ী উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ। মুসল্লিগণের দাবি, সমগ্র উপজেলার মানুষের দাবিকে উপেক্ষা করে কিছু অর্থলোভী সিন্ডিকেট নেতার কারণে মসজিদের মতো একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য করা ঠিক হয়নি। তারা জানান, সমগ্র উপজেলা বাসির মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনে গণভোটের মাধ্যমে সুন্দর ও সঠিক জায়গায় মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হোক। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তা বাস্তবায়ন করা হবে।

মানববন্ধন শেষে অনেকেই বলেন, জুড়ী উপজেলা কমপ্লেক্সের ভিতরে বা পাশে যদি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হতো তাহলে সমগ্র জুড়ী উপজেলা বাসির জন্য উপকার হতো। সাবেক পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের আশীর্বাদ পুষ্ট, জুড়ী উপজেলা সিন্ডিকেটের প্রধান উপদেষ্টা, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে শতশত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগকারী ও আওয়ামীলীগ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বার বার জুড়ী সদর জায়ফরনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বনে যাওয়া মাছুম রেজার লোভের কারণে জুড়ী বাসি একের পর এক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সবার মুখে মুখে একই কথা- এই ১৫ বছরে জুড়ীর সকল উন্নয়ন মাসুম রেজার বাড়িতে! স্বৈরাচার সরকারের একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্পের নামে এই মাছুম সিন্ডিকেট শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েও রয়েছেন বহাল তবিয়তে। মাছুম রেজা জুড়ীবাসীর কাছে এক মূর্তিমান আতঙ্ক।

Facebook
Reddit
Pinterest
Twitter
LinkedIn
Telegram
Email
Print

ADS

adsadsads
ADVERTISEMENT

Related Posts